ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওয়েব ১.০ থেকে শুরু করে ওয়েব ২.০ পর্যন্ত আমরা দেখেছি কিভাবে তথ্য আদান–প্রদান সহজ হয়েছে। কিন্তু এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে Web3 বা ওয়েব ৩.০। এটি শুধু নতুন প্রযুক্তি নয়, বরং ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাকেই বদলে দিচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ওয়েব ৩.০ হবে এমন এক যুগের সূচনা যেখানে ব্যবহারকারীর ডাটা, পরিচয় এবং আর্থিক লেনদেন আরও নিরাপদ ও স্বাধীন হবে।
Web3 হলো ইন্টারনেটের তৃতীয় প্রজন্ম যা মূলত ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। ওয়েব ২.০–তে আমরা তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ, ই-কমার্স ইত্যাদি সবকিছু বড় বড় কোম্পানির প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহার করি। কিন্তু ওয়েব ৩.০ তে ব্যবহারকারীরাই হবে আসল নিয়ন্ত্রক। অর্থাৎ আপনার ডাটা শুধুমাত্র আপনার, সেটি কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে বন্দি থাকবে না।
ওয়েব ২.০ আমাদের দিয়েছে Facebook, YouTube, Twitter, Instagram এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু সমস্যা হলো – আপনার প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি সার্চ, প্রতিটি ছবি বা ভিডিওর মালিকানা আসলে আপনার নয়, বরং কোম্পানিগুলোর।
অন্যদিকে Web3 এমন এক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে যেখানে ব্যবহারকারীরাই তাদের কনটেন্ট ও ডাটার মালিক হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো ডিজিটাল আর্ট NFT আকারে তৈরি করেন, তাহলে সেটি আপনার ওয়ালেটে নিরাপদ থাকবে এবং সেটির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না।
১. ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম – সব ডাটা ও অ্যাপ্লিকেশন ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে চলবে। ২. ডাটা মালিকানা ব্যবহারকারীর হাতে – বড় বড় কোম্পানির সার্ভারে ডাটা সেভ না হয়ে ব্যবহারকারীর ওয়ালেটে বা ডিসেন্ট্রালাইজড স্টোরেজে থাকবে। ৩. Cryptocurrency এবং টোকেন ইকোনমি – ওয়েব ৩.০ তে লেনদেন হবে ডিজিটাল কারেন্সি বা টোকেন দিয়ে। ৪. স্মার্ট কন্ট্রাক্ট – স্বয়ংক্রিয় চুক্তি ব্যবস্থা যা ব্লকচেইনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হবে। ৫. সেন্সরশিপ প্রতিরোধী – কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠান সহজে কোনো প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করতে পারবে না।
Cryptocurrency হলো Web3 ইকোসিস্টেমের প্রধান চালিকাশক্তি। যেমন Ethereum, Bitcoin, Solana ইত্যাদি। এই মুদ্রাগুলো শুধু বিনিয়োগ নয়, বরং ওয়েব ৩.০ তে প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনের জ্বালানি। স্মার্ট কন্ট্রাক্ট চালানো, NFT কেনা-বেচা, DeFi (Decentralized Finance) অ্যাপ ব্যবহার—সবকিছুই Cryptocurrency এর মাধ্যমে সম্ভব।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স এবং রেমিট্যান্সের মতো খাতগুলো দ্রুত বাড়ছে। Web3 এলে এর প্রভাব আরও গভীর হবে।
যদিও Web3 অসাধারণ সুযোগ তৈরি করছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন Meta, Google, Microsoft ইতিমধ্যেই Web3 তে বিনিয়োগ করছে। এক সময় হয়তো আমরা এমন ইন্টারনেট ব্যবহার করব যেখানে প্রতিটি ডাটা হবে ব্যবহারকারীর সম্পদ, প্রতিটি লেনদেন হবে স্বচ্ছ, আর প্রতিটি কনটেন্ট হবে তার স্রষ্টার।
Web3 শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি এক নতুন ইন্টারনেট দৃষ্টিভঙ্গি। ওয়েব ৩.০ আমাদের শেখাচ্ছে—"আমাদের ডাটা আমাদেরই সম্পদ।" ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক, Cryptocurrency, এবং স্মার্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে এটি এমন এক পৃথিবী তৈরি করছে যেখানে ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে।